4 w - Translate

আমাদের বিয়ে হয়েছে ৬ বছর আগে। প্রেম করে বিয়ে করেছিলাম। অনেক অল্প বয়সে আমরা বিয়ে করেছি …
আজ আমরা ২ টা বাচ্চার বাবা মা। ২য় বাবু হওয়ার পর আমি চেহারাতে স্নো পাউডার লাগানোই ভুলে গিয়েছি। ঘুরতে যাওয়া তো অনেক দূরের কথা।
আমি ২য় বাবু হওয়ার পর শারীরিক দিক দিয়ে বেশ মোটা হয়ে গিয়েছি। কিন্তু ইফতি আমাকে কখনো এই নিয়ে অভিযোগ করে নাই। ও আমাকে শুরুতে যেভাবে ভালোবাসতো সেভাবেই ভালোবাসে এখনো।

প্রায় ৩ বছর পর আমার আর ইফতির পিকনিকের প্লান হয়েছে একটা রিসোর্টে। ইফতির ফ্রেন্ড রা ও তাদের ফ্যামিলি। ইফতি বলল
-"বাবুদের তোমার আম্মুর কাছে রেখে চলো। তাহলে তুমি ঘুরে একটু রিলাক্স থাকবা"

বাচ্চাদের কে রেখে ঘুরতে যাওয়াটা একটু কষ্টের ছিলো কিন্তু অনেকদিন পর ইফতির সাথে এমন পিকনিক টা ও আনন্দের ছিলো। ভাবলাম অনেকদিন পর ও আর আমি একটু একান্তে সময় কাটাবো। অনেকদিন হয়েছে ওর সাথে একা কোথাও বেড়াতে যাওয়া হয় না। বাচ্চাদের আম্মুর কাছে রেখে আমরা রওনা হলাম।

আমাদের পৌঁছাতে বিকাল হয়ে গেলো। কি সুন্দর রিসোর্ট। আমরা অনেকগুলো কাপল গিয়েছিলাম। ইফতির বাকী বন্ধুরা ইদানীং বিয়ে করেছে। আমি আর ইফতি সবচেয়ে পুরাতন জুটি।
সন্ধ্যায় সবাই সুইমিংপুলে নামলো। আমি নামতে চাইলাম ইফতি বলল

-"পানি অনেক ঠান্ডা ,তুমি নেমো না। জ্বর চলে আসবে তোমার"…

ইফতি আমার অনেক খেয়াল রাখে। আমি খুশি হয়ে গেলাম। পুলের উপর বসে পানিতে পা ডুবিয়ে
রেখেছি। রাতে সবাই একসাথে ডিনার করে অনেক্ষণ গল্প করলাম। গানের কলি খেললাম। এরপর মেয়েরা একে একে নিজের রুমে চলে গেলো। আর ছেলেরা পুলের পাশে গল্প করসিলো। ইফতি আমাকে বলল
-রুমে যাও আমি আসছি। ঘুম আসলে ঘুমিয়ে পইরো।

আমি রুমে চলে গেলাম। হটাৎ খেয়াল করলাম আমার পায়ের সেন্ডেল আমি পুলের পাশেই ফেলে আসছি।

সেন্ডেল আনতে গিয়ে দূর থেকে দেখলাম ইফতি আর তার বন্ধুরা গল্প করছে।
একটু সামনে এগিয়ে যেতেই শুনলাম ইফতি ওর এক বন্ধু শুভ কে বলছে

-তোরাই ভালো আছস। এখন বিয়ে করসিস। আমার এত তাড়াতাড়ি বিয়ে করা ঠিক হয় নি। তনু দিনদিন যেভাবে মোটা হচ্ছে ওকে আমার পাশে খালাম্মা লাগে। নিজের কোন যত্নও করে না। কোন রোমান্স নাই জীবনে। বিরক্ত হয়ে গেছি। মাঝে মাঝে মনে হয় বাহিরে দুই একটা প্রেম করি। অন্তত মাইন্ড রিফ্রেশ থাকবে।

-আরে বেটা এগুলা বলিস না। তনু একটু মোটা হয়ে গেছে এই যা। তুই ওকে দিয়ে জিম করা। আর বাইরে টাইরে প্রেম এগুলা কেমন কথা? তোর দুইটা বাচ্চা আছে।

-বাচ্চা আছে এজন্য আরো পারি না। তুই দেখসস তনু রে? একটু আগে পুলে নামতে চাইসিলো। এই শরীর নিয়া পুলে নামতো। কেমন বিশ্রী দেখা যাইতো,নিজের কমন সেন্স কি কাজে লাগাতে পারে না? তোর বৌ তো স্লিম সুন্দর তুই বুঝবি না। আমার এখন বিয়ে করলে পার্ফেক্ট হইত। তোদের মত স্লিম আর সুন্দর বৌ পাইতাম।

-ধুর বেটা যা রুমে যা। তনু তোর জন্য অপেক্ষা করছে। আমার বৌ ও অপেক্ষা করছে আমার জন্য আমি গেলাম।

-এত সুন্দর বৌ থাকলে আমি এখন তোর মত পুলের পাশে বন্ধুর সাথে আড্ডা দিতাম না। বৌ এর সাথে রোমান্স করতাম। তুই যা আমি একটু পরে যাবো।

আমি খুব দ্রুত দৌড়ে রুমে চলে আসলাম। এসে শুয়ে পড়লাম। অনেক্ষণ পর ইফতি আসলো রুমে। রুমে ঢুকেই দুইবার জিজ্ঞেস করলো
-তনু ঘুমাইসো?

আমি কোন উত্তর দিলাম না। একটু পর ইফতিও ঘুমিয়ে পড়লো। আমি নিশব্দ হয়ে শুধু চোখের পানি দিয়ে বালিশ ভিজালাম। লজ্জা করছিলো খুব। উঠে বাথরুমের আয়নায় নিজেকে দেখলাম। হ্যাঁ অনেক মোটা হয়ে গিয়েছি। কিন্তু আমি তো ভাবতাম ইফতির এতে কোন সমস্যা নাই। ও কখনো আমাকে বলেও নাই। ওর মনে আমাকে নিয়ে এত যন্ত্রণা ও তো কখনো বলে নাই। আয়নার দিকে তাকিয়ে কাঁদছিলাম সেদিন। সকালে আমরা নাস্তা করে আরো কিছুক্ষণ ঘুরে রওনা হলাম ঢাকার দিকে। আমি ইফতিকে একেবারেই বুঝতে দেই নাই যে আমি কথাগুলো শুনেছি। খুব স্বাভাবিক আচরণ করছিলাম। ও এত দিন ধরে অভিনয় করছিলো আমি তো এতটুক অভিনয় করতেই পারি।

ঢাকায় পৌঁছে বাচ্চাদের কে আম্মুর বাসা থেকে নিলাম। ইফতির সাথে স্বাভাবিক ব্যবহার করছিলাম কিন্তু আগের মত স্বাভাবিক ভাবে সংসারে মন দিতে পারছিলাম না। ইফতি অফিসে চলে গেলো আমি ওর পছন্দের সব রান্না করলাম।
ও বাসায় ফিরার আগে বাচ্চাদের ঘুম পাড়িয়ে আমি ফ্রেশ হয়ে নিলাম হালকা একটু সাজগোজ ও করলাম। খাবারের টেবিলে সবচখাবার সাজিয়ে টেবিলে মোম দিয়ে সাজালাম।

ইফতি বাসায় ফিরে অবাক হয়ে গেলো। আমি বললাম

-যাও ফ্রেশ হয়ে আসো।

-আজ কি কোন স্পেশাল দিন তনু?

-না স্পেশাল না। তোমার সাথে একসাথে অনেকসময় ধরে সময় কাটানো হয় না। তাই ভাবলাম আজ একটু একসাথে খাই দাই।

-আচ্ছা আমি ফ্রেশ হয়ে আসি।

ফ্রেশ হতে যাওয়ার সময় ইফতি আমার কপালে চুমু দিয়ে গেলো। কিন্তু কেন যেন সেদিনের পর থেকে সব কিছুকেই মেকি মনে হয়। ইফতি ফ্রেশ হয়ে খাবারের টেবিলে আসলো। আমি ওকে খাবার বেড়ে দিচ্ছি। নিজের সব পছন্দের খাবার দেখে ইফতি বেশ খুশি।
খাওয়া দাওয়া শেষে ইফতি বলছে

-তনু তুমি তো আমাকে খাওয়াতে খাওয়াতে মোটা বানিয়ে ফেলবা.. এত বেশি খেয়েছি আজকে।

আমি ইফতির দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললাম

-চিন্তা কইরো না। তুমি মোটা হইলে আমি বাহিরে দুই একটা প্রেম করতে চাইবো না। তুমি যেমনই থাকো ঐভাবেই তোমাকে মৃত্যুর আগে পর্যন্ত ভালোবেসে সংসার করে যাবো। আমার কোন আক্ষেপও নাই কেন আমি এত তাড়াতাড়ি বিয়ে করে বাচ্চা নিয়ে নিলাম। একটা বার ফিগার নষ্ট হয়ে যাবে এইটা ও ভাবি নি বাচ্চা নেওয়ার সময়। আমি ভাবি না ইফতি। আমি তো শুধু ভালোবাসি। তোমাকে ,বাচ্চাদেরকে আর এই সংসারকে ...

কথাগুলো শেষ করে আমি রান্নাঘরে চলে গেলাম। হুম যখন এগুলা বলছিলাম ইফতির চোখে লজ্জা দেখসিলাম। ইফতি নিচের দিক তাকিয়ে ছিলো। হয়ত অনুশোচনাবোধ এসেছিলো। নাহলে হয়ত এটাও একটা অভিনয় ছিলো যা সে এক খাটে ঘুমিয়ে অনেকদিন যাবৎ আমার সাথে করে আসছে।

হায়রে মেয়ে মানুষ!
আমরা কতকিছুর পরও স্বামী সংসার নিয়ে ভাবি।
আর তারা কত কিছু নিয়েই না ভাবে।
আমরা চাইলেই স্বামী বদলানোর প্রস্তাব রাখতে পারি না অন্য কোথাও। তারা পারে …

ঘটনা : ফাঈজা তাসনিম মৌ
লিখেছেন : Jakia Juliet