হজরত ইবরাহীম আ. ছিলেন হজরত নূহ আ. ১১ তম অধস্তন পুরুষ। নূহ আ.-এর প্রায় দু্ই হাজার বছর পর তিনি পৃথিবীতে আসেন। তাঁকে বলা হয় আবুল আম্বিয়া তথা নবীদের আদি পিতা। সাতজন নবী ছাড়া সব নবী-রাসুল তাঁর বংশ থেকে এসেছেন। তিনি মুসলমানদের জাতির পিতা। মুসলিম নামটি তিনি প্রথম রাখেন।
হজরত ইবরাহীম আ. প্রভুপ্রেমে ত্যাগ-তিতিক্ষার অনন্য নজির স্থাপন করে গেছেন। আল্লাহর প্রতি তাঁর আনুগত্য ছিল শর্তহীন। যে কারণে তাঁর প্রাণাধিক প্রিয় পুত্র হজরত ইসমাঈল (আ কে আল্লাহর হুকুম পালনের জন্য কোরবানী করতেও দ্বিধাবোধ করেননি।
বিজ্ঞাপন
আল্লাহ তাআলা তাঁর প্রশংসায় বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই ইবরাহিম ছিলেন সব গুণের সমাবেশকারী, সব কিছু থেকে মুখ ফিরিয়ে এক আল্লাহর অনুগত এবং তিনি মুশরিক ছিলেন না। তিনি ছিলেন তাঁর অনুগ্রহের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশকারী। আল্লাহ তাঁকে মনোনীত করেছিলেন এবং পরিচালিত করেছিলেন সরল পথে।’ (সুরা : নাহল, আয়াত : ১২০-১২১)
তার ছেলে ইসহাক আ. ও তার নাতি ইয়াকুব আ.- এর বংশধর ‘বনী ইসরাইল’ নামে পরিচিত। তার বংসেই জন্ম নেয় বনী ইসরাইলের সব নবী এবং তার অপর ছেলে ইসমাইল আ.-এর বংশে জন্ম নেন বিশ্ব ও শেষ নবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।
নবীজি হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জন্মগ্রহণ করেছিলেন আরবের কুরাইশ বংশে। তারা ছিল হজরত ইসমাঈল (আঃ)-এর বংশধর। সেই হিসেবে ইবরাহীম আ. হলেন আরববাসীর পিতা। ইসলামের নবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেহেতু আরব বংশের তাই ইবরাহীম আ. তাঁরও পিতা ছিলেন। এভাবে ইবরাহীম আ. সকল উম্মতে মুহাম্মাদীরও পিতা। উম্মতে মোহাম্মদীকে তিনিই মুসলিম হিসেবে নামকরণ করেছেন।
পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে,
قوله تعالي ملة ابيكم ابراهيم .هو سمكم المسلمين
‘তোমাদের জাতির পিতা ইবরাহীম, তিনিই তোমাদের নাম রেখেছেন মুসলিম।’ ( সুরা হাজ্জ-৭৮)। এই আয়াত থেকেই প্রমাণিত তিনি মুসলিম জাতির পিতা।
এই আয়াতের তাফসিরে মুফাস্সিগণ বলেন, ইবরাহীম আ. আরবদের বংশগত পিতৃপুরুষ ছিলেন। অর্থাৎ আরবদের বংশ পরম্পরা হজরত ইবরাহীম আলাইহি সালাম পর্যন্ত গিয়ে মিলিত হয়েছে। কিন্তু মর্যাদার দিক দিয়ে তিনি সমগ্র মুসলিম বিশ্বের পিতার আসনে আসীন। অর্থাৎ তিনি যদিও বংশ পরম্পরায় সকল মুসলিমের পিতা নন কিন্তু সম্মানের দিক দিয়ে সকলের নিকট পিতৃতুল্য।
তাফসিরে কুরতুবীতে এই আয়াতের ব্যাখ্যা এসেছে এভাবে, ইবরাহীম আলাইহিস সালাম সমগ্র আরব জাতীর পিতা। আর কোন কোনো মুফাসসির বলেন, ‘সকল মুসলিমকে উদ্দেশ্য করেই তাঁকে ‘পিতা’ বলে সম্বোধন করা হয়েছে যদিও সকল মুসলিম তার সন্তান নয়। এর কারণ হল, মুসলিমদের নিকট ইবরাহীম আলাইহিস সালাম এর মর্যাদা পুত্রের নিকট পিতার মর্যাদা সমতুল্য।’ (তাফসীরে