আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ। মুসা হোমিও হলের পক্ষ থেকে সকলকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা। দীর্ঘদিন পর আজকে আমরা বর্তমান সময়ে প্রায়শই পাওয়া যাচ্ছে এমন একটি জটিল রোগ সোরিয়েসিস নিয়ে কিছু আলোচনা করবো ইনশাআল্লাহ। আমারা প্রথমত জেনে নেই সোরিয়েসিস কী??
সোরিয়াসিস এক ধরনের সাধারণ এবং দীর্ঘমেয়াদী চর্মরোগ। সারা বিশ্বের ন্যায় বাংলাদেশেও এই রোগের প্রাদুর্ভাব দিন দিন বাড়ছে।
এতে মলিন আঁশযুক্ত ছোপ দেখা যায়, যা উঠে যাওয়ার পর লালচে আভা বা সামান্য রক্তক্ষরন হতে পারে।
সোরিয়াসিস হল একটি অস্বস্তিকর অটোইমিউন অবস্থা; যা ত্বকে চুলকানি, খসখসে দাগ সৃষ্টি করে যার নাম প্লেক। এটি প্রধানত কনুই, হাঁটু, পিঠের নীচে এবং মাথা/মাথার ত্বকে ঘটে। যদিও কোন প্রতিকার নেই, তবে লক্ষণ ব্যবস্থাপনার জন্য নির্দিষ্ট কিছু চিকিৎসা করা যেতে পারে।
যদিও প্রচলিত এলোপ্যাথিক চিকিৎসার ব্যবস্থা এর স্থায়ী কোন প্রতিকার নেই, তবে লক্ষণ অনুসারে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায় এর সফলতার সহিত আরোগ্য লাভ সম্ভব ।
এবার আসুন আমরা সোরিয়াসিসের লক্ষণ, কারণ, প্রকার এবং চিকিৎসা নিয়ে আলোচনা করি।
সোরিয়াসিসের লক্ষণ:-
সোরিয়াসিস কেবল ত্বকের ফলক এবং ফুসকুড়ির চেয়েও বেশি কিছু ঘটায়। সোরিয়াসিসে আক্রান্ত ব্যক্তিরা প্রায়শই অতিরিক্ত উপসর্গ অনুভব করেন যা দৈনন্দিন জীবনে উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাব ফেলতে পারে। সম্ভাব্য সোরিয়াসিস লক্ষণগুলির পরিসর সম্পর্কে সচেতন হওয়া আপনাকে চিকিৎসা ও যত্ন নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা সনাক্ত করতে সহায়তা করতে পারে।
দৃশ্যমান ত্বকের ফলকের বাইরে সোরিয়াসিসের সাধারণ লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে;
চুলকানি ত্বক যা তীব্রভাবে অস্বস্তিকর বোধ হতে পারে, জ্বালা বা দংশনের মত অনুভূতি সহ। চুলকানির তীব্রতা রাতে নিদ্রাহীনতা দেখা দিবে বা দিতে পারে।
ত্বকের শুষ্ক, ফাটা জায়গায় হালকা আঁচড়ের কারণে রক্তপাত হতে পারে। ঠান্ডা ঋতুতে বা শীতকালে যখন শুষ্ক বায়ু থাকে তখন ত্বকের বেদনাদায়ক ফাটার যন্ত্রণা আরো তীব্রতা পেতে পারে।
নখ ও পায়ের নখ খসখসে, বিবর্ণতা, চূর্ণবিচূর্ণ এবং অস্বাভাবিক ঘন হওয়া। নখের সোরিয়াসিস বিব্রতকর হতে পারে এবং নখের যত্নকে কঠিন করে তুলতে পারে।
ব্যথা, কোমল জয়েন্ট যা কম্পন, ফুলে বা শক্ত বোধ করতে পারে। জয়েন্টে ব্যথা 30% পর্যন্ত সোরিয়াসিসে আক্রান্ত ব্যক্তিকে প্রভাবিত করে।
যদিও বিরক্তিকর চুলকানি ত্বকে স্ক্র্যাচ করার জন্য আপনাকে বাধ্য করবে কিন্তু স্ক্র্যাচ করা থেকে বিরত থাকতে হবে নতুবা আরো সাংঘাতিক যন্ত্রণাদায়ক অবস্থা তৈরি হবে।
আপনি যদি গুরুতর ব্যথা, জ্বর এবং ফোলা অনুভব করেন তবে অবিলম্বে চিকিত্সার পরামর্শ নিন, কারণ এটি একটি গুরুতর সংক্রমণ নির্দেশ করতে পারে। আপনার সমস্ত উপসর্গের প্রতি মনোযোগী হওয়া, শুধুমাত্র ত্বকের ফলক নয়, পর্যাপ্তভাবে সোরিয়াসিস পরিচালনা এবং আপনার জীবনযাত্রার মান বজায় রাখার চাবিকাঠি।
সোরিয়াসিসের কারণ:-
এ রোগের মূল কারণ এখনো বিস্তারিত জানা যায়নি। (সিফিলিটিক টেন্ডেন্সি )
তবে বংশে কারো থাকলে হবার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
বারবার গলায় ইনফেকশন, সূর্যের আলো, কোন কোন ঔষধ, মানসিক চাপ, শারীরিক আঘাত ইত্যাদি কারণে সোরিয়াসিস বাড়তে পারে।
সোরিয়াসিস কোন প্রকার সংক্রামক বা ছোঁয়াচে রোগ নয়।
সোরিয়াসিস ঘটে যখন ইমিউন সিস্টেম অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া দেখায়, প্রদাহ সৃষ্টি করে। সাধারণত, ইমিউন সিস্টেম ব্যাকটেরিয়ার সাথে লড়াই করে এবং সংক্রমণ এড়ায়। কিন্তু সোরিয়াসিসের সাথে, ইমিউন সিস্টেম ভুল করে সুস্থ ত্বকের কোষকে আক্রমণ করে।
এটি ত্বকের কোষগুলির বৃদ্ধির চক্রকে ত্বরান্বিত করে, যার ফলে কোষগুলি তৈরি হয় যা ফলক হিসাবে উপস্থিত হয়। ত্বরান্বিত কোষ প্রক্রিয়াও শেডিং এবং স্কেলিং বাড়ে।
উপরন্তু, যেহেতু সোরিয়াসিসের জিনগত দিক রয়েছে, এর মানে হল যে যদি আপনার পিতামাতার মধ্যে একজন থাকে যারা এই অসুস্থতায় ভুগছেন, তাহলে আপনিও সম্ভবত এটি বিকাশ করতে চলেছেন।
আক্রান্ত হওয়ার বয়স:-
ছোট বাচ্চা থেকে শুরু করে ৭০ বৎসর পর্যন্ত যে কোন নারী বা পুরুষের এই রোগ হতে পারে। তবে ১৫ থেকে ৪৫ বছরের মধ্যে এই রোগ বেশি দেখা যায়।
সোরিয়াসিসের প্রকারভেদ:-
বিভিন্ন ধরণের সোরিয়াসিস রয়েছে এবং প্রতিটির নিজস্ব অনন্য লক্ষণ রয়েছে।
প্লেক সোরিয়াসিস - সর্বাধিক সাধারণ প্রকার; শুষ্ক, উত্থিত, আঁশযুক্ত প্যাচ সৃষ্টি করে।
নখের সোরিয়াসিস - নখকে প্রভাবিত করে, গর্ত, অস্বাভাবিক বৃদ্ধি এবং বিবর্ণতা সৃষ্টি করে।
গুটাতে সোরিয়াসিস - অল্প বয়স্ক/শিশুদের প্রভাবিত করে; ছোট, স্কেলিং দাগ সৃষ্টি করে।
বিপরীত সোরিয়াসিস - চামড়া folds প্রদর্শিত; মসৃণ, স্ফীত প্যাচ সৃষ্টি করে।
পাস্টুলার সোরিয়াসিস - তালু/তলায় পুঁজ-ভরা ফোস্কা বা বিস্তৃত হওয়ার কারণ।
এরিথ্রোডার্মিক সোরিয়াসিস - বড় এলাকায় গুরুতর, খোসা ছাড়ানো ফুসকুড়ি সৃষ্টি করে।
নিষিদ্ধ খাদ্য:-
কিছু কিছু খাদ্য সোরিয়াসিসের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। যেমন গরু, খাসি, লালমাংস, টক জাতীয় ফল, অতিরিক্ত তৈলাক্ত খাবার, অতিরিক্ত চিনি ও মশলা যুক্ত খাবার, সকল প্রকার ফাস্টফুড, ধুমপান, মদ্যপান এবং জর্দা। এ গুলো সম্পূর্ণ ভাবে বর্জন করতে হবে।
উপযোগী খাদ্য:-
সামুদ্রিক মাছ, মিষ্টি আলু, ব্রকলি, শাক, বাধাকপি।
রোগীর করণীয়:-
শুস্ক ত্বকে সোরিয়াসিস বৃদ্ধি পায়, ত্বক কে আদ্র রাখতে নিয়মিত ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে।
মাত্রাতিরিক্ত সূর্যালোক হতে সাবধান থাকবেন, তবে স্বল্প সময়ের জন্য সোরিয়াসিস আক্রান্ত ত্বক সূর্যালোকে রাখলে উপকার পাওয়া যায়।
গোসলের সময় ত্বক বেশি ঘসাঘসি করবেন না।
দুশ্চিন্তা, রাগ, মানসিক চাপ থেকে দূরে থাকুন।
চিকিৎসা:- আমাদের প্রচলিত এলোপ্যাথিক চিকিৎসা ব্যবস্থায় এটি ভাই ভাবে আরোগ্য লাভ করার কোন চিকিৎসা এখনো পর্যন্ত আবিষ্কৃত হয়নি শুধুমাত্র কিছু উপশম ব্যতীত। পক্ষান্তরে অটোইমিউন ডিজিজ হওয়ায় এর চিকিৎসা কঠিন এবং সময় সাপেক্ষ হলেও আশার বাণী হচ্ছে সঠিক হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় এটি আরোগ্য লাভ সম্ভব। তাই আপনি এ জাতীয় কোন উপসর্গের সম্মুখীন হলে অবহেলা না করে নিকটস্থ একজন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে চিকিৎসা নিন।
মুফতি ডাঃ মোঃ আব্দুল কাদের (রনি)
ডি এইচ এম এস (ঢাকা)
মুসা হোমিও হল।
দেওগাঁও, রাজাশন,সাভার, ঢাকা
মোবাইল:-01918-367721
1234 rofik
Delete Comment
Are you sure that you want to delete this comment ?
Md Rustom
Delete Comment
Are you sure that you want to delete this comment ?